|নুরুল আলম|বৈশ্বিক মহামারি করোনায় গত দুই বছর বাংলা নববর্ষ বরণে কোন অনুষ্ঠানাধি ছিল না। এবছর করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মহামুনি বিহার চত্বরে ১৩৮তম বুদ্ধ মেলা প্রাঙ্গণ এবং বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল-বিকেল পাহাড়ি-বাঙ্গালির মিলন মেলায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার চিত্র ফুটে উঠেছে। এশো হে বৈশাখ, এসো এসো।
বাংরা নববর্ষ ১৪২৯ বরণে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ পুরো দেশে প্রতিটি অনুষ্ঠানে এবার মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের ন্যায় বেসামাল ভীর জমেছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় গুরুত্বরোপের কারণে গত ১৪২৭-২৮ বঙ্গব্দে পহেলা বৈশাখ বরণে মানুষ জমায়েত হতে পারেনি। এ বছর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় তিন পার্বত্য জেলাসহ গোটা দেশ বর্ষবরণে উত্তাল ও মাতোয়ারা হয়ে উঠে।
খাগড়াছড়ি জেলার ঐতিহ্যবাহী মানিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন বর্ষবরণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, মনোজ্ঞ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। অন্যদিকে উপজেলায় ত্রিপুরারা বৈসু, মারমা জনগোষ্ঠীরা সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু ও বাঙ্গালিরা বৈশাখি উৎসব পালন করে। যাকে এ বাক্যে বলা যায় বৈসাবিন।
বিশেষ করে এখানে মংরাজার আদিবাস হওয়ায় ১৮৮৩ সালে তৎকালীন মংরাজা নিপ্রু সাইন রাজ প্রসাদের অদূরে মাহামুনি টিলায় মায়ানমার থেকে অষ্টধাতুর তৈরি একটি বুদ্ধমূর্তি এখানে স্থাপন করেন। ঐ বুদ্ধ মূর্তির স্থাপন কালটি মারমাব্দ চন্দ্র মাসের প্রথম দিন হওয়ায় মারমা জনগোষ্ঠীরা এ দিনটিতে বুদ্ধ মেলা হিসেবে পালন করে আসছে। এ বছর মেলার ১৩৮ তম বছর। ফলে পহেলা বৈশাখ বা ১৪ এপ্রিলের এ মেলায় এবার মানুষের বাধঁভাঙ্গা জোয়ারে পরিণত হয়।
শুধু মেলা প্রাঙ্গন নয়, হাট-বাজারের অলিগণি, দোকান-পাট, রাস্তা ঘাটে মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে। যা ইদ বাজারের বিকিকিনকেউ হার মানিয়েচে।
বাজারের অনামিকা স্টোরের সত্বাধিকারী অরুন কুমার নাথ বলেন, গত দুই বছর আমরা (ব্যবসায়ীরা) ব্যবসা করতে পারিনি। দোকান কর্মচারী ও খরচে ব্যবসার ঘাটতি ছিল। এবার বৈশাখ বরণে নানা অনুষ্ঠানাদিতে সেই লোকসান বা ঘাটতি উঠে আসবে।
মহামুনির বুদ্ধ মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি নিপ্রু মারমা বলেন, পরপর দুইবছর মেলা ও অনুষ্ঠানাধি বন্ধা থাকায় এবার লোকসমাগশে জনস্রোতে পরিণত হয়েছে। মহামুনি টিলায় বিহার প্রাঙ্গণে নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় এবং দোকান পাট স্থাটনে জায়গার পরিধি সংকুলান না হওয়ার আশঙ্খায় এবার বেশির ভাগ দোকান নদীর চলে এসেছে। প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও স্বেচ্ছাসেবীদের পরিশ্রমে কোন অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই ১৩৮তম বুদ্ধ মেলা উদযাপন করলাম।