শিরোনাম
মঙ্গল. ডিসে ২৪, ২০২৪


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় তথা সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র্য ও বনাঞ্চল রক্ষার স্বার্থে এ অঞ্চলে সবধরনের গাছ কাটা নিষিদ্ধ করেন। যে সমস্ত গাছ কাটার উপযোগী এবং প্রয়োজন তা বন বিভাগ থেকে পারমিট নেওয়ার মাধ্যমে কাটতে হবে। বলাবাহুল্য যে, বন বিভাগ থেকে পারমিট নেওয়ার শর্ত অনেক কঠিন। যা সাধারণ একজন মানুষের পক্ষে নেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। গাছের পারমিটে এই কঠিন শর্ত দেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বৈধভাবে যে কেউ যেন গাছ কাটতে না পারেন।

বৈধভাবে গাছ কাটলে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের পেট ভরবে না। তাই পেট ভরাতে অবৈধভাবে গাছ কাটতে এবং কাঠ পাচার করতে গোপনে প্রকাশ্যে উৎসাহ দেয়৷ প্রতিটি অবৈধ কাঠের গাড়ি প্রতি বন বিভাগকে ৩ শত থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। বড় ধরনের বাগান কাটলে বন বিভাগকে তার দামের ৫% দিতে হয়। এরাও সন্ত্রাসী দল গুলোর মত চাঁদাবাজ। সরকারি আরো অনেক দপ্তর, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি অবৈধ কাঠের গাড়ি হইতে চাঁদা নেয়। বেশ করে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের চেয়ে রাঙ্গামাটি অঞ্চলে বন উজাড় বেশি হচ্ছে। এখানে সন্ধ্যা নামলেই কাঠ পাচারকারীদের উৎপাত বেড়ে যায়।

পার্বত্য জেলার জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা পরিচালিত বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘জনসংহতি সমিতি’ (জেএসএস) ও প্রসিত খীসা পরিচালিত’ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ (ইউপিডিএফ) নামক আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলোর অস্ত্র ক্রয় ও প্রশিক্ষণসহ সাংগঠনিক পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তার মূল উৎস হচ্ছে ‘অবৈধ কাঠ পাচার’। দলগুলো নিজেদের খেয়াল খুশি মত অবৈধ কাঠের পারমিট দিয়ে থাকে। তাদের অনুমতি নিয়ে পাহাড়ের ভিতর থেকে অবৈধভাবে কাঠ আসে। তাদেরকে গোল কাঠ ট্রাক প্রতি ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়। লাকড়ি গাড়ি প্রতি ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। গাছের বাগান বিক্রি করলে মোট দামের ১০-১৫% দিতে হয়। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ইউপিডিএফ এর এক শীর্ষ নেতা জানান, ইউপিডিএফ এর সাংগঠনিক পরিচালনার ৭০% অর্থ আসে কাঠ-বাঁশ ও ঠিকাদারী থেকে। দলগুলো এখন মানুষ থেকে আগের মত চাঁদা নেওয়ার উপর নির্ভরশীল নয়। এখন বিকাশ এর মাধ্যমে টাকা নিয়ে থাকে।

শুধুমাত্র কাঠ-বাঁশ ও ঠিকাদারীর চাঁদাই সন্ত্রাসী দল গুলোর সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যথেষ্ট। একই ঘটনা জেএসএস এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউপিডিএফ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, গুজব ও কুৎসা রটিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সেনাবাহিনী তথা সকল নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক বার্তা দিচ্ছে। যার কারণে নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে সাধারণ মানুষ নেতিবাচক ধারণা পাচ্ছে।

আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল গুলো বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদ করতে কূটনীতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে এবং আত্যাধুনিক অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে প্রতিনিয়ত পাহাড়ে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যাসহ রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করছে। তাদের এই দেশদ্রোহীতামূলক কর্মকাণ্ডের অর্থনৈতিক যোগান ও অর্থের মূল উৎস হচ্ছে ‘অবৈধ কাঠ পাচার ও সকল ব্যবসা বানিজ্য থেকে’।

স্থানীয় জনসাধারণ দাবি অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ করতে না পারলে উক্ত দলগুলোর অর্থের মূল উৎস বন্ধ করা কোন ভাবেই সম্ভব হবে না। তারা চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করে বাঙ্গালী, সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।

আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল গুলোর লাগাম টেনে ধরতে হলে আপাতত অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ রাখতে হবে। যেহেতু “সরকার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল রক্ষার জন্য কাঠ পাচার নিষিদ্ধ”-সেহেতু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধ কাঠ পাচার রোধ করতে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে- “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী” -লেখক: এডভোকেট রাকেশ চক্রবর্তী, রাঙ্গামাটি।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!