নুরুল আলম:: পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার ঐতিয্যবাহী মং সার্কেলের মং রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিন দিনব্যাপী রাজ পুণ্যাহ মেলা ও রাজস্ব আদায়ী উৎসবের উদ্বোধন করেন ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালের দিকে মং সার্কেলের প্রধান রাজা সাচিং প্রু চৌধুরীর হাতে তলোয়ার ও রাজস্ব উপহার তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা হয়।
রাজা সাচিং প্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সিএইচটি হেডম্যান নের্টওয়ার্কের সভাপতি সাবেক পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী মারমা। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু।
অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, ইউএনডিপির খাগড়াছড়ি জেলা ফ্যাসিলিটেটর সুবাস দত্ত চাকমা, কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি রনিক ত্রিপুরা।
পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সৌজন্য উপহার রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী হাতে তুলেদেন।
খাগড়াছড়ি রিজিয়নের জি টু আই মেজর মো: জাহিদ হাসান, গুইমারা রিজিয়নের লেফটেন্যান্ট মো: মোতালেব খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ও গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডারের পক্ষে সৌজন্য উপহার তুলেদেন।
পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য শুভ মঙ্গল চাকমা, পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য শাহিনা আক্তার, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য শতরুপা চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শানে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এপিবিএন মো: মনিরুজ্জামান সেবা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেনিয়া চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রশিদসহ হেডম্যান, কার্বারী, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজপুণ্যাহ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য হিরণজয় ত্রিপুরা বলেন, এ আয়োজন পার্বত্যাঞ্চলের তিনটি সার্কেলে বিভক্ত সব জনগণের কাছে একটি ভিন্নধর্মী আবেদন রাখে। রাজপুণ্যাহকে ঘিরে ব্যাপক উৎসব আয়োজনও হয়ে থাকে পৃথক তিন সার্কেলে। তবে এ বছর কোনো মেলা হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার উৎসব মুখর পরিবেশের মাধ্যমে চলছে । বিভিন্ন জায়গা থেকে পাহাড়ি বাঙ্গালি র্নিবিশেষে মেলায় অংশ গ্রহন করছে।
রাজপুণ্যাহর তৃতীয় দিন রোববার (১২ ডিসেম্বর) নারী হেডম্যান ও নারী কার্বারিদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান থাকবেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা। মং রানী উখ্যেংচিং মারমা (চৌধুরী) অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। আনুষ্ঠানিকতায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য শতরূপা চাকমা এবং ইউএনডিপির প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
রাজপুণ্যাহ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও গোলাবাড়ি মৌজার হেডম্যান উক্যসাইন চৌধুরী বলেন, রাজপুণ্যাহ ঘিরে প্রতিবছর ব্যাপক উৎসব আয়োজন হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর করোনা মহামারির কারণে রাজপুণ্যাহর আয়োজন সীমিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র রুটিন কাজগুলোই করা হবে এবার।
আলুটিলা মৌজার হেডম্যান ও পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য হিরন জয় ত্রিপুরা ও গোলাবাড়ি মৌজার হেডম্যান উক্যসাইন চৌধুরী রাজা সাচিং প্রু চৌধুরীর হাতে রাজস্ব ও উপহার তুলে দেন।
সভাপতির বক্তব্যে রাজা বলেন, এই তিন শ্রেনীর জমি চট্রগ্রামের ঊনিশ শত সালের আইন ও পার্বত্য চুক্তির ধারা গুলো বাস্তবায়ন করা, পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার জন্য আহবান জানিয়ে তিনি বলেন জলবায়ু পরির্বতের ফলে পাহাড়ের ক্ষতিকর প্রভাব ও বন উজাড় বন্ধ করতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রতিটি মৌজার বনভূমি সংরক্ষনের জন্য হেডম্যান কার্বারীদের আহবান জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতাদের কারনে হেডম্যান কার্বারী নিজস্ব আইনে বিচার করতে পারে না পার্বত্যাঞ্চলের হেডম্যান কার্বারীদের ভাতা প্রদান করে সম্মানীত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কণ্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পাহাড়ের শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আন্তরিকতার সহিত কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে মং সার্কেলের বিভিন্ন মৌজার হেডম্যান, কার্বারীরা রাজা সাচিং প্রু চৌধুরীর হাতে রাজস্ব উপহার তুলেদেন।