শিরোনাম
মঙ্গল. ডিসে ২৪, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:: করোনাকালে বাড়ছে বাল্যবিবাহ; নাই নজরদারী প্রশাসনের। খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন সংস্থা বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য প্রশাসনিক নির্দেশ থাকলেও মানছে না অনেকে। গত তিন মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০ বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করেছে। ইতিমধ্যে, গুইমারা উপজেলা দাখিল মাদ্রাসায় ৫ টি বাল্য বিবাহ সম্পূর্ন হয়।
এই জেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের বিস্তারের এ সময় বাল্যবিবাহের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামীণ পরিবারগুলোতে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা এ সময়টায় দেশে ফিরেছেন। সমাজ বাস্তবতায় প্রবাসে কাজ করা ছেলের ‘পাত্র’ হিসেবে চাহিদা বেশি। আর এই অবরুদ্ধ অবস্থায় বিয়ে দিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন অভিভাবকেরা। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এখন কম হচ্ছে। সেই সুযোগও কাজে লাগাচ্ছে কেউ কেউ। সমাজের দরিদ্র অনেক অভিভাবকই এ সময় মেয়ের বিয়ে দিতে চাচ্ছেন, এ সময়টায় মানুষের চলাফেরা কমে গেছে। তাই খুব বেশি মানুষকে আপ্যায়ন করতে হচ্ছে না। এতে তাদের খরচও কমে যাচ্ছে।
সম্প্রতি, গুইমারায় বিভিন্ন স্থানে ৫টি বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যেমন গুইমারা থানা সংলগ্ন লুন্দুক্যার পাড়া খোরশেদ আলমের মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়সে বিবাহ দিয়েছে তার পরিবার। আবার আব্দুল বারেক নামক ফার্নিচার ব্যবসায়ির মাদ্রাসা পড়ওয়া এক ১৬ বছরের অপ্রাপ্ত বয়েসের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমির হোসেনের মেয়ে, জালিয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েল প্রধান শিক্ষক বাবুল মাস্টারের মেয়ে, পশ্চিম বড়পিলাকের সরওয়ার ডাক্তারের মেয়ে, সহ ৫টি।
এতে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় কাজী আব্দুস সালাম এছাড়াও এসব বিবাহ জায়েজ করার জন্য জন্ম নিবন্ধন জাল জালায়াতি করে লটারী পাবলিকের মাধ্যমে এপিটেপির দোহাই দিয়ে বিয়ে সম্পূর্ন করে থাকে।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, লকডাউনে ঘরের মধ্যে পরিচিত মানুষের মাধ্যমে মেয়ে শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার বেশি হচ্ছে। এই দিকটাও বাল্যবিবাহ দেওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করছে অনেক ক্ষেত্রে। তবে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ার কথা সরকারি স্তরে কিন্তু স্বীকার করা হচ্ছে না। সরকারি ভাষ্য, হয়তো বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে কিন্তু বেড়ে যে গেছে এর অকাট্য প্রমাণ নেই। যদিও মাঠপর্যায়ের গবেষণায় বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট।
সামাজিক শক্তিগুলোর সহযোগিতায় বাল্যবিবাহ কমছিল। কিন্তু করোনার কারণে এই সামাজিক শক্তিগুলোর সক্ষমতা কমতে শুরু করে। যুব ফোরামের সদস্যরাও কাঙ্কিক্ষত মাত্রায় বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করতে পারছে না। আবার করোনা নিয়ে বাস্তবিকভাবে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় পুলিশ বা প্রশাসনও সহযোগিতা করতে পারছে না। সব মিলে একধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। আর এ সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছেন অভিভাবকেরা।
সরকারের হেল্পলাইন নম্বরে (১০৯) আসা কলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বটে, কিন্তু সেখানে বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়েছে তা দেখা যায়নি। সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ। একজন যে আরেকজনের বাড়িতে যাবে, সেটা এখন বন্ধ হয়ে আছে। মানুষের মধ্যে ভীতি আছে আবার তাঁরা আনুষ্ঠানিকতাও করতে পারছেন না। তাই বিয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে, তা বলা শক্ত।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!