শিরোনাম
মঙ্গল. ডিসে ২৪, ২০২৪

জেনারেল শফিউদ্দিনের দৃপ্ত পদচারনায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি

পারভেজ হায়দার॥

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবনিযুক্ত প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এর জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অনুকরণীয় পদচারনা দেশের সম্মান ও উজ্জ্বল ভাবমূর্তি সৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে। বহিঃবিশ্বে জেনারেল শফিউদ্দিনের সফল ভূমিকা শুধুমাত্র জাতিসংঘ মিশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, দীর্ঘ চাকুরী জীবনের বিভিন্ন সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোর্স, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশ নিয়ে তিনি তার উজ্জ্বল মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন, সেই সাথে বৃদ্ধি করেছেন দেশের ভাবমূর্তি।

জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোজিয়াম কোর্সে অংশ নেয়া ছাড়াও ঐ দেশের বেইজিং এ ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে এনডিইউ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তার এনডিইউ কোর্সের রেজাল্ট এতই ভালো ছিল যে তাকে ‘প্রেসিডেন্ট অব দি স্টুডেন্ট গ্রুপ’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। তিনি যুক্তরাষ্টের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে North East South Asia Center (NESA) কর্তৃক আয়োজিত এক্সিকিউটিভ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন এবং ব্যক্তিগতভাবে ঘঊঝঅ এর গ্রাজুয়েট হিসাবে সম্মানিত হন।

এছাড়া তিনি দীর্ঘ চাকুরী জীবনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য সেমিনার, কনফারেন্স এবং ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেছেন। তার পড়াশোনা ও গবেষনার বিষয়সমূহ সাধারণত ডিফেন্স স্টাডিজ, অপ্রচলিত নিরাপত্তা ঝুঁকি, স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ, ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি। জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন পেশাগত সফলতার পাশাপাশি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রফেশনাল ডিগ্রি ও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিভা ও মেধার দৃষ্টান্ত রেখেছেন যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ মেজর পদবীতে ১৯৯৩-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ১৬ মাস United Nations Operations in Mozambique  (ONUMOZ) এর সাথে জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ২০১৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এ United Nations Multidimensional Integrated Stabilization Mission (MINUSCA) এ ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসাবে অংশগ্রহণ করেন।

এই মিশনে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তার অনুকরণীয় পারদর্শীতার কারণে তিনি Special Representative of the Secretary General (SRSG) এর নিকট থেকে সম্মাননা পদক পেয়েছেন। জাতিসংঘে দায়িত্ব পালন কালে জেনারেল শফিউদ্দিনের প্রতি নির্ভরতা ও আস্থার ফলাফল স্বরূপ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে চেয়ারম্যান SEA (Sexual Exploitation and Abuse) প্রতিরোধ দল, চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার টাস্ক কমিটি এবং মিলিটারি অবজারভারদের প্রধান হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

এখানে উল্লেখ্য, এই মিশনে অবস্থানকালে ০৯ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে তাকে অ্যাম্বুশে পড়তে হয়েছিল, তবে তিনি তার উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা ও সময়োচিত সিদ্ধান্তের কারণে সেসময় রক্ষা পান। জাতিসংঘসহ বহিঃবিশ্বের বিভিন্ন কোর্স বা সেমিনারে অংশগ্রহণের সময় জেনারেল শফিউদ্দিন শুধুমাত্র তার মেধা আর পেশাদারিত্বের গুনাবলির কারণে সকলের দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হন নি, তার ব্যক্তিত্ব ও অন্যের প্রতি হাস্ব্যোজ্জ্বল আচরনও তাকে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছিল। বিভিন্ন দেশের রীতিনীতি, সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-আচরণ ইত্যাদি বিষয়াদি বিবেচনায় রাখার পাশাপাশি তিনি সব সময় ব্যক্তিগত কর্মকান্ডে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন।

তার বর্ণাঢ্য চাকুরী জীবনের বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রতিনিধি হয়ে মোজাম্বিক, সুইজারল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া, থাইল্যান্ড, তুরষ্ক, চীন, শ্রীলংকা, নিউজিল্যান্ড, নেপাল, ভারত, সৌদি আরব, উগান্ডা, কাতার, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ক্যামেরুন, মরক্কো, রুয়ান্ডা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, জার্মানী, নেদারল্যান্ড, মালদ্বীপ, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কেনিয়া, ফ্রান্স, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশগুলো সফর করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যে সকল কোর্স, সেমিনার এবং সিম্পোজিয়ামে অংশ নিয়েছেন তার অন্যবদ্য উপস্থিতি ও পারদর্শিতা সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছে। তার হাত ধরে জাতিসংঘ মিশনসহ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!