নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে বেপরোয়া কাঠ পাচারের ফলে বনজ সম্পদ উজাড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে পাচারসহ অনিয়মের মাধ্যমে পুরো ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতিসহ প্রভাবশালী পাচারচক্র। চক্রটি অবৈধ কাঠ পাচারের জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তা ও পরীক্ষণ ফাঁড়িকে মোটা অংকের টাকা ঘুস দিয়ে তাদের সুবিধা আদায় করছে।
বন ও পরিবেশ রক্ষায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ চোখে পড়ছে না। এ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরতদের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও উত্তরের মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও তার সঠিক কোনো সমাধান পাচ্ছে না পার্বত্যবাসী
পার্বত্য চট্টগ্রাম বর্তমান সেন্ডিকেট চক্রের সর্বকালের রেকর্ড পরিমাণ কাঠ পাচার চলছে। পার্বত্য অঞ্চল থেকে কাঠ পাচারে চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাতেই পাচারকারীদের কাঠ পাচারের নিরাপদ সময় হিসেবে ঠিক করে নিয়েছে তারা। বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে বোঝাইকৃত অবৈধ কাঠের গাড়ির উপরি ভাগে বিভিন্ন কাঁচামাল বোঝাই করে অভিনব কায়দায় প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে পাচার অব্যাহত রেখেছে সংঘবদ্ধ চক্রগুলো।
খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলার পরীক্ষণ ফাঁড়িগুলোর বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বিকল্প সড়ক পথে কাঠ পাচার চলছে অবাধে। জেলার রামগড়, মানিকছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, লক্ষীছড়ি ও খাগড়াছড়ি চক্রটি তাদের নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে বেছে নিয়েছে। এসব উপজেলা গুলো থেকে চট্টগ্রাম ও ফেনী হয়ে ঢাকায় কাঠ পাচার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অপরদিকে যোত পারমিট দিয়ে কাঠ নিলে তাতেও টিপির ছাড়পত্রের চেয়ে অতিরিক্ত কাঠ বোঝাই করে ট্রাকে করে এবং এক জাস্থানের পার্মিট নিয়ে অন্যত্র থেকে কাঠ সংগ্রহ করে যোত পার্মিটের স্টকে নিয়ে একত্রিত করে যোত পার্মিটের কাঠ বলে নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারী চক্রটি। তছাড়াও টিপির ছারপত্রে দেওয়া কাঠের সাইজের সাথে লোড পয়েন্টের কাঠের কোনো মিল নেই, লালি কাঠের জায়গায় সেগুন কাঠ অতিরিক্ত নিয়ে থাকে।
চোরাই কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট চক্র অবৈধভাবে সরকারি বনাঞ্চলের বন বাগান উজার করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশবাদীরা জানান সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে বাধাহীনভাবে কাঠ পাচার হওয়াতে পরিবেশ ধ্বংসের মুখে পড়ছে। কাঠ পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই বন উজাড় হয়ে যাবে।
পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এলাকায় ৬ লক্ষাধিক একর বনাঞ্চল ৫০ শতাংশ বৃক্ষশূন্য ও ভূমি বেদখল হয়ে যাওয়ার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। পার্বত্য অঞ্চলের উপজেলাগুলোতে গাছ কেটে সমতল জেলায় পাচার করা বন ধ্বংসের প্রধান কারণ। এছাড়াও অবাধে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও ফসলি জমি নির্মাণসহ একাধিক বিষয় বন ধ্বংসের জন্য দায়ী। খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে প্রায় ২শতাধিক লাইসেন্স বিহীন করাত কল (সো-মিল ) রয়েছে। যেখানে হাজার হাজার ঘন ফুট কাঠ অবৈধ প্রাচারকারীরা মজুত করে সুয়িং ( চিড়াই) করে সুযোগ বুঝে ট্রাক বোঝায় করে অভিনব কায়দায় সমতল জেলা গুলোতে প্রাচার করে।
অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলে লাইসেন্সবিহীন ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা ব্রিক ফিল্টগুলোতে অবাধে কচিকাঁচা গাছ কেটে পোড়ানোর ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাই আড়তে মজুদ করা হয় এসব অবৈধ কাঠ। পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই বনভূমি উজাড় ও অবাধে নিধনের কারণে বিরান ভূমিতে পরিণত হতে পারে।
তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জীববৈচিত্রের সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে বন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি জাতীয় বন নীতি ১৯৯৪ এবং ২০ বছর মেয়াদি বন মহাপরিকল্পনা ১৯৯৩-২০১৩ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল বলে জানা গেছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালে দেশের ২০ শতাংশ ভূমি বনায়ন করার কথা থাকলেও পার্বত্য অঞ্চলের ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর অধীনে পার্বত্য এলাকায় কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এছাড়া বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন ১৯৭৪-এর ২৩ এবং ২৪ ধারা পার্বত্য অঞ্চলকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, রাতের অন্ধকারে যে সব কাঠ পাচার হচ্ছে তা প্রতিরোধ করতে গেলে জনবল দরকার,কিন্তু পাচার বন্ধে কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। যার ফলে সকল পরিবেশ পরস্থিতি বিবেচনা করে রাতের আধারে ঝুকি নিয়ে আমরা কোন ব্যাবস্থা নিতে পারছি না।
এব্যাপারে, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার আলমের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এবং কথা না বলে মুঠোফোন রেখে দেন।