শিরোনাম
মঙ্গল. ডিসে ২৪, ২০২৪

“জুয়া ” ছড়িয়ে পড়েছে গুইমারার গ্রামে গ্রামে: উদ্যোগ নেই প্রতিরোধের

নিজস্ব প্রতিবেদক :খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারায় গ্রামে গ্রামে ‘শীলং তীর’ জুয়া আবারও জোরালো পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে।  বর্তমানে এ ব্যাধিটি সামাজিক ক্যান্সারের মত রূপ নিয়েছে। স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে প্রান্তিক কৃষকরাও এই জুয়ায় আসক্ত হয়ে লাখ লাখ টাকা হারাচ্ছে। এমনকি নারীরাও এ খেলায় মত্ত হয়ে গেছে। গেল ২ বছরের ব্যবধানে গুইমারা উপজেলার অন্তত ১৫ স্থানে ভয়ঙ্করভাবে এ জুয়ার বিস্তৃতি ঘটেছে। ইউপিডিএফ এবং স্থানীয় দুষ্টচক্র’কে ম্যানেজ করে, এই জুয়া চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়।

বিভিন্ন সূত্রমতে জানা যায়, ভারতের ‘শীলং’ নামক স্থান হতে বিশেষ পদ্ধতিতে এ জুয়া খেলাটি পরিচালিত হয় বিধায় এটি ‘শীলং তীর’ খেলা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ভাবছেন কিভাবে সম্ভব? ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত সংখ্যাভিত্তিক পদ্ধতিতে চলে এই জুয়া। এটি একটি কৌশলগত অনলাইন ভিত্তিক জুয়া। সাধারন মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দুষ্ট চক্রের একটি বিরাট মরন ফাঁদ। বিশেষ কৌশলের এ জুয়া খেলাটির ফাঁদে অনেকে পা দিয়ে অর্থ হারানোর কারণে পরিবারিক অস্বচ্ছলতা, ঋণগ্রস্থ ও সর্বশান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে স্ত্রী-সন্তান রেখে এলাকা থেকে পালানোর খবরও পাওয়া গেছে। অনেক পরিবারে দেখা দিয়েছে পারিবারিক সংকট।

পেকেজ যাত্রার নামে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা থেকে যাত্রা গানের নত্যর্কিদের নাছিয়ে মানুষের জমায়েত করে। বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবক যুবতীরা এসে পেকেজ নাটক দেখতে গিয়ে ৬য় গুটি দিয়ে ডাব্বা জুয়া খেলে। হাতে গোণা কয়েকজন জুয়ার খেলা থেকে হাসিমুখে ফিরলেও সিংহভাগই ফিরেন নি:স্ব হাতে। এ ডাব্বা পরিচালণা কারীদের সাথে গুইমারার কয়েকজন নামদারী হলুদ সাংবাদিক খেলা শুরু হওয়ার আগে জুয়া পরিচালণাকারীদের সাথে চুক্তি করে নেয়।এর সাথে জড়িত থাকেন কিছু দুষ্ট প্রকিৃতির পুলিশ, এবং জুয়া খেলার চাদাঁ দিতে হয় উপজাতি সংগঠনকে। এ ডাব্বা খেলা রাত(৯-১০)টায় শুরু হলে সকালে শেষ হয়। অপরদিকে  সিলং তীর নামক জুয়াটি ঘরে ঘরে ছলচে বড়পিলাক এলাকায় শাহিন নামক এক ব্যাক্তি সিলং তীরের এজেন্ট হিসেবে  খেলাটি পরিচালণা করছেন বলে গুইমারা আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে জানা যায়।এই সিলং তীর পরিচালণা কারী শাহিন নারী ও পুরুষদের কে এজেন্ট হিসেবে দিয়েছে, তার দেওয়া এজেন্টেরা পাড়া মহল্লায় গিয়ে খেলায় ১০ টাকায় ৮শত টাকা, ২০ টাকায় ১৬শত টাকা বা ৮০ গুণ লাভ পাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এ লাভের আশায় নতুন ধরনের এই জুয়ায় রিকশা-চালক, দিনমজুর শ্রেণীর লোকরাই বেশি হুমড়ি খেয়ে পড়ে। জুয়ার আকর্ষণ রাখতে এবং জুয়ার আসর থেকে সাধারণ মানুষ যাতে মুখ ফিরিয়ে না নেন, সেজন্য প্রতিদিন কয়েকজনকে নামে মাত্র শিলং তীরের বিজয়ী হওয়ার কৌশলে খেলা খেলে থাকে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গুইমারায় শীলং এর এজেন্ট পয়েন্ট অন্তত ১৫টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বটতলী, যৌথখামার, আমতলীপাড়া, হাজীপাড়া, দেওয়ান পাড়া, হাতিমুড়া, রামছুবাজার ডাক্তারটিলার নিচে, নতুনপাড়া, বুধংপাড়া, বরইতলী প্রভৃতি। প্রত্যেকটি স্পটে স্থানীয় চতুর একজন লোক মূল হোতাদের পক্ষে এজেন্ট হিসেবে এ জুয়া খেলা পরিচালনা করে। এসব এজেন্টরা হাজার টাকার জুয়া বাজির কমিশন হিসেবে মূল কোম্পানীর কাছ থেকে পায় ৬০ টাকা। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত এসব এজেন্টের মাধ্যমে কর্তন করা জুয়ার টাকা ও নম্বর সাড়ে তিনটার মধ্যেই পৌঁছে দিতে হয় প্রধান এজেন্টদের কাছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এর প্রধান দায়িত্বে রয়েছে তিনজন। তাদের পরিচালিত ‘শীলং তীর’ জুয়ার আসর এখন প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় চলে। তাদের অবস্থান সদর উপজেলা থেকে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী বটতলী এলাকায়। জানা যায়, সাধারন ব্যবসায়ী থেকে এ জুয়া চালিয়ে এখন ওরা বিত্তশালী হয়ে উঠেছে। ভারতের সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার ছাড়া বাকি ৬ দিনই জুয়া খেলা বসে।

অভিযোগ উঠেছে, কিছু অসাধু চক্র’কে ম্যানেজ করে এ জুয়া খেলা চলে আসছে। এই জুয়া প্রচলনের প্রথম দিকে এলাকার বেকার বা আড্ডাবাজ তরুন যুবকদের টার্গেট করা হলেও বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও নারীরা আসক্ত হয়ে পড়েছেন এ খেলায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসার সময় টিফিনের টাকা শীলংয়ের বাজিতে রেখে আসছে লাভের আশায়।

কিছু সূত্রে জানা যায়, গেলো বেশ কিছু দিন ধরে গুইমারা এলাকার আনাচে কানাচে এই জুয়া খেলা চলছে। মাঝে প্রশাসনের বেশ তৎপরতায় কিছু দিন কমে ছিলো। গত দুই মাস বটতলী এলাকার নতুন এজেন্টের মাধ্যমে বেশ জোরালো পরিসরে চলছে এ জুয়াটি।

খেলোয়াড়দের একটি নির্দিষ্ট সূত্রমতে, আগে শুধুমাত্র গুইমারা উপজেলাতেই শীলং এর দৈনিক খেলা হত ২-৩ লক্ষ টাকা। বর্তমানে ৬-৭ লক্ষ টাকার খেলা হচ্চে দৈনিক।

সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করেন, জুয়ার কারনে যুব সমাজসহ সকল শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ‘শীলং তীর’ জুয়া বন্ধ হওয়ার দরকার।

স্থানীয় এক সমাজকর্মী অভিযোগ করেছেন, এসব জুয়াড়িদের কারণে এলাকায় অস্থিরতা বাড়ছে। উঠতি বয়সী তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। সামাজিক সংকট দেখা দিচ্ছে। টাকা পয়সাসহ সর্বস্ব লুটে ধীরে ধীরে নিঃস্ব করে দিচ্ছে পরিবারকে। এখনই জুয়ার র্কাযক্রম বন্ধ হওয়া উচিত। জুয়ার আড়ালে এসব এলাকায় ইয়াবা ও চোলাইমদ বিক্রি করা হয় বলে তার অভিযোগ রয়েছে।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!