ডজন খানিক পত্রিকার হাজারগুণের এক সম্পাদক
নিজস্ব প্রতিবেদক:: তিনি একজন। কিন্তু পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ডজন খানিক পত্রিকার। বাণিজ্যে প্রসারিত হাত প্রতিনিধি নিয়োগে। প্রতিজনের কাজ থেকে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে বানিয়ে দিচ্ছেন প্রতিনিধি। এতেই শেষ নয়। তারপরের দায়িত্ব নিচ্ছেন সম্পাদক নিজেই প্রতিনিধিদের স্ব-স্ব এলাকায় প্রেসক্লাবে গিয়ে নতুন করে সাংবাদিক পেশার কার্ড ধরিয়ে দেওয়া কথিত সাংবাদিক নামধারীদের “প্রেসক্লাবের সদস্য করার কাজে। ঘটনার সূত্রপাতটা এভাবেই।
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য, খাগড়াছড়ি টিভি জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক, বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি,দৈনিক সাঙ্গু নিজস্ব প্রতিবেদকও পার্বত্য নিউজের ব্যুারো টিফ এইচ এম প্রফুল্লকে “খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জীবনের ক্ষতির শংকায় নিরাপত্তা চেয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় সাধারন ডাইয়েরী করেছেন।
কথিত ঐ সম্পাদককের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সকালে তিনি খাগড়াছড়ি সদর থানায় এ সাধারন ডাইয়েরী নং ১১০৩/২০২০ ইং তারিখ ২৭-১০-২০২০ করেন। সাধারন ডাইয়েরীতে সাংবাদিক এইচ এম প্রফুল্ল অভিযোগ করেন, গত ২৫ অক্টোবর, রোজ রবিবার, দুপুর ১২ টার দিকে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের হল আমি ও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দীলিপ চৌধুরী বসে আড্ডারত ছিলেন।
এ সময় দুইজন লোক প্রেসক্লাবে প্রবেশ করেন। তাদের একজনের নাম মোহাম্মদ আল আমিন। জাতীয় পত্রিকা একুশে নিউজ এবং দৈনিক মুক্তালোকসহ একাধিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছাড়াও গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বলে পরিচয় দেন। কেন আসলেন জানতে চাইলে তিনি তার পত্রিকার নিয়োগ প্রাপ্ত জেলা প্রতিনিধিকে প্রেসক্লাবে সদস্য করতে এসেছেন বলে জানান।
কত দিন ধরে আপনার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিকতা পেশায় জানতে চাইলে তিনি জানান,কয়েক দিন আগে নিয়োগ দিয়েছেন। তখন সাংবাদিক প্রেসক্লাবের সদস্য হতে আবেদন করতে হলে অন্তত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে জানালে তিনি অনেকটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনারা প্রেসক্লাবকে কুক্ষিগত করে রেখেছন। অন্য সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবের সদস্য হতে বঞ্চিত করছেনসহ খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব নিয়ে নানা কু-মন্তব্যসহ দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বেড়িয়ে যান।
পরে তার কিছু অনুগত সাংবাদিক এইচ এম প্রফুল্ল ও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছে। যা আমার ও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এদিকে কথিত সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আল আমিন-এর পত্রিকায় সদ্য ব্যুারো চীফের দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহ মো: ফাহাদ ২৬ অক্টোবর খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে এসে সভাপতি জীতেন বড়–য়া,সাধারন সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ ও বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক অপু দত্তের উপস্থিতিতে লিখিতভাবে অভিযোগ করে জানান,গত ২৪ অক্টোবর ঐ সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আল আমিন খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা আসেন।
সে সম্পাদক তাকেসহ ৭ জনকে (সাত) ব্যুারো চীফ, ক্রাইম রিপোর্টার ও স্টাফ রিপোর্টারসহ বিভিন্ন পদে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিবে মর্মে জানায়। । ভূক্তভোগী আব্দুল্লাহ মো: ফাহাদ জানায়, কোন এক কারণে ঐ সম্পাদক গত ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তবে ২৬ অক্টোবর সকাল থেকে টাকা পাঠানোর জন্য ফোন দিচ্ছে। আব্দুল্লাহ মো: ফাহাদ তার লিখিত অভিযোগে ভন্ড ও প্রতারক কথিত সাংবাদিকের বিচার দাবী করেন।
এদিকে কথিত সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আল আমিন-এর নানা অপকর্ম নিয়ে জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজসহ বিভিন্ন পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।
“তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকেই এখন সাংবাদিক, “কালীগঞ্জে ৫’শ টাকায় ‘ সাংবাদিকতা আইডি কার্ড’ বিক্রি করতে চয়ে বেড়াচ্ছে আল-আমিন, পকেটে ৩ হাজার সম্পাদক,৫’শ টাকায় মিলে সাংবাদিক আইডি” ইত্যাদি শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।
ঐসব পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়,কাধে ব্যাগ ও গলায় ঝুলানো সাংবাদিক আইডি কার্ড সাথে ইয়া লম্বা ক্যামেরা। একাধীক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক তিনি। সব সময় ৩ হাজার সম্পাদক তার পকেটেই থাকে। এদেরকে ফোন দিলে যে কাউকে সাংবাদিক বানানো কোন ব্যাপারই না। এমনই সব কথা বলে বেড়ান গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মুনশুরপুর গ্রামের কথিত সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-আমিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধীক ব্যক্তি জানান,কথিত সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-আমিনের সংসার চলতো অনেক কষ্টে। সংসারের খরচ যোগাতে কয়েকদিন আগেও সে রাজ যোগালির কাজ করতো। প্রাইমারীর গন্ডিও পার করতে পারেনি। কিন্তু সে কি এমন আলাদিনের চেরাগ পেলেন, যে রাতারাতি এত বড় মাপের সাংবাদিক হয়ে গেলেন? এমন প্রশ্ন অনেকের। ৫শ টাকায় বিক্রি করেন সাংবাদিকতার আইডি কার্ড। কথিত ওই সাংবাদিকের ডাকে সাড়া দিয়ে স্থানীয় অনেকেই এখন সাংবাদিক।
সূত্র আরো জানান, সে নিজেকে একাধীক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক পরিচয়ে ইতিমধ্যে নিজের গ্রামের নামসহ স্থানীয়ভাবে গঠন করেছে একাধীক সাংবাদিক সংগঠন। গড়ে তুলেছে হলুদ সাংবাদিকতার একটি চক্র। তার চক্রের সাংবাদিক হওয়া থেকে বাদ যায়নি মসজিদের ইমাম, ফার্মেসী ব্যবসায়ী, বিকাশ ইজেন্ট, মুদি দোকানী, মাদক কারবারী, রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী,দাদন ব্যবসায়ী, জমির দালাল, পুলিশের সোর্স, হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী, প্রবাসী, হকার, কবিরাজ, বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি ও মোটর সাইকেল চালকরাও।
এ ব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় মূলধারার কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর সাথে। ওই চক্রের কারণে অনেক জায়গায় গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে এখন আর নিজেকে পরিচয় দেন না তারা। এই পরিচয় দিলে মহান পেশাটি নিয়ে অনেকের কাছ থেকেই নীতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়। বর্তমানে স্থানীয় হলুদ সাংবাদিকদের কাছে অনেকটা কোনঠাসা হয়েই পড়েছেন তারা।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মিজানুল হক জানান, ভাচ্যুয়াল দুনিয়ায় কিছুই নিজের মাঝে থাকে না। ফেসবুকের ওই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হওয়ার সুবাদে দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে এতে করে অন্য একটি জেলায় নিজের জেলা ও উপজেলাকে খুব বাজেভাবে উপস্থাপন করা হলো। এই ধরণের হলুদ সাংবাদিকদের কারণে অনেক জায়গায় মূলধারার সাংবাদিকরা আজ কোনঠাসা। তবে এ নিয়ে সংশ্লিরা এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তা নাহলে সাংবাদিকতার মত মহান পেশাটি নিয়ে সাধারণ মানুষ শুধু নীতিবাচক মন্তব্যই করবে না, পেশাটি কলঙ্কিত হবে এবং আগ্রহ হারাবে মেধাবীরা।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, স্ট্যাটাসটি আমি দেখেছি। সাংবাদিকতাকে বলা হয় রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ, যাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। কিন্তু আজকে কিছু নামধারী সাংবাদিক মহান পেশাটিকে কুলষিত করছে। তবে এ নিয়ে আমাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা উচিত।