নুরুল আলম :: খাগড়াছড়ির রামগড়ে চাঁদার জন্য সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত ফেনীর জুয়েল ট্রেডার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ওবায়দুল হকের ছেলে মঞ্জুরুল আলম (৩৫) ও কমর্চারি নোয়াখালীর সুধারামের মোঃ রাজু (২৮)’কে ৭ দিনেও উদ্ধার করা যায়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ’র প্রসীত গ্রুপের সন্ত্রাসীরা তাদেরকে অপহরণ করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে অপহৃতরা উদ্ধার না হওয়ায় তাদের পরিবার পরিজন চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। ২৩ আগস্ট ফেনী থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা জুয়েল ট্রেডার্সের প্লাস্টিক ডোর (দরজা)বাহি পিকআপ রামগড়ের যৌথ খামার এলাকায় পৌঁছলে সন্ত্রাসীরা গাড়িটি আটক করে। তারা প্রথমে চালকের কাছে চাঁদা পরিশোধের টোকেন চায়। কিন্তু চালক টোকেন দেখাতে না পারায় সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে গাড়িটি প্রধান সড়ক থেকে দাঁতারাম পাড়া রাস্তা হয়ে ভিতরে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে গাড়িতে থাকা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মঞ্জুরুল আলম (৩৫) ও কর্মচারি মোঃ রাজু (২৮)’কে ২টি মোটরসাইকেলে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এসময় তারা গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে চালক মিজানকে ছেড়ে দেয়।
চালক মিজান বলেন, খাগড়াছড়ি সদরের এসএস ট্রেডার্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্ডারের ৩০টি প্লাস্টিক ডোর ডেলিভারি দিতে তারা যাচ্ছিলেন। রামগড়-জালিয়াপাড়া সড়কের যৌথ খামার অতিক্রম করার সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে ৪ জন উপজাতি সন্ত্রাসী পিকআপের সামনে এসে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে তার গাড়িটি আটকায়। চাঁদার টোকেন নাই বলার সাথে সাথে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে রাস্তা থেকে প্রায় ৩-৪’শ গজ দূরে একটি জঙ্গল এলাকায় গাড়িসহ তাদের সবাইকে নিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রুপের ঐ সন্ত্রাসীরা তাকে জানায়, জুয়েল ট্রেডার্সের মালিকের কাছে চাঁদার ২০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা জুয়েল ট্রেডার্সের মালিককে কল করে চাঁদার বকেয়া টাকা পাঠাতে বলে। এ টাকা ছাড়া কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না বলেও তারা সাফ জানিয়ে দেয়। এ সময় মালিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রামগড় থানার পুলিশের এক কর্মকর্তা ঐ সন্ত্রাসীদের লিডারকে মোবাইল ফোনে গাড়ি ও লোকজনদের ছেড়ে দিতে বলায় তারা আরও ক্ষুব্দ হয়ে উঠে।
এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা জুয়েল ট্রেডার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি মঞ্জুরুল আলম ও ফিটিংস মিস্ত্রি রাজুকে ২টি মোটরসাইকেলে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এসময় তারা গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে (চালক) চলে যেতে বলে। অপহরণের এ ঘটনায় চালক মিজানুর রহমান বাদি হয়ে ২৪ আগস্ট রামগড় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহৃতদের উদ্ধারে সম্ভাব্য বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় অভিযান চালালেও এখনও তাদের কোন হদিস পায়নি। রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, অপহৃতদের উদ্ধারে বিজিবি পুলিশ যৌথভাবে বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ওসি বলেন, চাঁদার টাকা নিয়ে ঝামেলার কারণেই ওই দুই ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, অপহরণকারিরা ইউপিডিএফের প্রসীতখীসা গ্রুপের সদস্য।
ফেনীর জুয়েল ট্রেডার্সের মালিক মেহেদী হাসান জুয়েল বলেন, অপহৃতদের পরিবার পরিজন চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছেন।