নিজস্ব প্রতিবেদক :: খাগড়াছড়িতে সরকারি বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেয়া বিদ্যুৎ’য়ের খুুঁটি ও সংযোগ দেয়ার নাম করে লাখ লাখ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের অসাধু ব্যক্তিদের যোগসসাজশে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরা মিলে সাধারণ মানুষদের সাথে প্রতারণা করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন ও আধুনিকায়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ী জেলা খাগড়াছড়ির এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি সুবিধা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ সংযোগ ও এলাকায় খুটিঁ স্থাপনের কথা বলে জেলা সদর, মানিকছড়ি, গুইমারা, দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণা করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ও সরকারি বিভিন্ন দফতরের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় প্রতারকদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা।
মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়নের মাঝপাড়া এলাকার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তাইন্দং ইউপির ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহীন সরকার জনপ্রতিনিধির সীল ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ এনে দেয়ার নাম করে ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেক এলাকায় খুঁটি বসানোর পর সেটি আবারও তুলে নিয়ে ১০-১২ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্য এলাকায় নিয়ে গিয়েছে। তার এসব কাজে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত। এর প্রতিবাদ করায় শাহীন সরকার নিজস্ব বাহিনীকে দিয়ে সাধারণ মানুষ জনকে হুমকি প্রদান করছে।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর মো. মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, সরকার যেখানে বিনামূল্যে খুঁটি ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিচ্ছে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আবু তাহের। এলাকাবাসী এ বিষয়ে সমাধান চেয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
শুধু মাটিরাঙ্গায় নয় একই অবস্থা মানিকছড়ি, গুইমারা, দীঘিনালা, পানছড়ি ও জেলা সদরে। কোন কোন জায়গায় সরাসরি বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন পরিচয়ে কোথাও দালাল দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ স্থানে ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন দলের নাম। মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি, গোমতি, শান্তিপুর, মাটিরাঙ্গা সদর, গুইমারা’র বিভিন্ন এলাকায় ৫ শত, ৭ শত থেকে ১ হাজার ফুট দূরত্ব থাকলেও মোটা অংকের টাকা দিলে সংযোগ পাওয়া যায়। নিয়ম মাফিক সংযোগ চাইলে, গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।
এছাড়াও বিল বকেয়া হলে গ্রাহকদের বিলের কপি না দিয়ে, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেয় স্থানীয় লাইনম্যান ও বিল পরিশোধের নামে টাকা নিয়ে পরিশোধ না করে, পুনরায় টাকা আদায়ের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ব্যাপারে আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ আবু হানিফ সোহেল’এর সাথে যোগাযোগ করলেও কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অনুরূপভাবে অন্যান্য উপজেলায়ও আবাসিক প্রকৌশলীগণ স্থানীয় দায়িত্বরত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মানিকছড়ি উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আসাদুল ইসলাম জানান, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। তিনি কারো কাছ থেকে টাকা লেনদেন করেনি।
আরেক অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শাহীন সরকার জানান, আগামী ইউপি নির্বাচনে তাকে পরাজিত করতে এলাকার কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করছে। তার এ অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ সাকিব হোসেন জানান, প্রকল্পের আওতায় খুঁটিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরকারি খরচে দেয়া হচ্ছে। কেউ যদি প্রকল্পের জন্য অর্থ দাবি করেন তবে তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।