নিজস্ব প্রতিবেদক:: খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা ও মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ও সংযোগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ জনগণ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর গণস্বাক্ষরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এদিকে মাটিরাঙ্গায় সাবেক আবাশিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী আমানুল্লা চৌধুরী, একই অফিসের সহকারী আলম সহ স্থানীয় কিছু সিন্ডিগেট চক্র মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিদ্যুতের খুটি দিয়ে সংযোগ দেওয়ার নামে প্রতারনা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের বাজার এলাকাতে প্রায় ৫০ জন লোকের নিকট থেকে বিদ্যুতের নতুন খুটি স্থাপন করে সংযোগ দেওয়ার নামে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এমন ঘটনা গুইমারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক নতুন খুটি স্থাপনের নামে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মাটিরাঙ্গায় সহকারী আবাশিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী আলম ও গুইমারার লাইন ম্যান অহিদ।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি এলাকার ফারুক জানান, গত ২৬ আগস্ট’২০১৯ইং তারিখে বিদ্যুৎ সংযো্গ পাওয়ার জন্য ২৬ জনের থেকে টাকা সংগ্রহ করে সাবেক চেয়ারম্যান রহমতুল্লাহ এর মাধ্যমে ১লক্ষ ৭৫হাজার টাকা মাটিরাঙ্গা বিদ্যুৎ অফিসে দিয়েছি। এখনো বিদ্যুৎ খুটি দিয়ে সংযোগ দিচ্ছে না।
বেলছড়ির মমিনুল্লাহ জানান, আমার এলাকায় বিদ্যুৎ খুটি দিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়ার নামে আমার পার্শ্ববর্তী ৪জন শিরু মিয়া, মমতাজ বেগম, আয়াত আলী, আইয়ুব আলী ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে সংযোগ পেয়েছে। তাদের পার্শ্ববর্তী বাড়ী আমার। দুরত্বের অজুহাত দিয়ে ২৬ হাজার টাকা নিয়েও বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে সাবেক চেয়ারম্যান রহমতুল্লাহ সহ আমার এক দুসম্পকের আত্মীয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ অফিসের আলমের পরামর্শে বৈদ্যুতিক খুটি বানিয়ে নিয়ে আসি। নিয়ে আসার পর দুরত্বের অজুহাতে সংযোগ না দিয়ে তাদের বৈদ্যুতিক খুটি সংগ্রহ করে সংযোগ নেওয়ার জন্য বলছে।বর্তমান বৈদ্যুতিক খুটি হইতে আমার বাড়ী ৩শ ফুট দুরত্ব। কিন্তু আমার একই এলাকায় পার্শ্ববর্তী ৮শ-১হাজার ফুট দুরত্বের সংযোগ রয়েছে ২০-২৫টি। একই এলাকায় দুই নীতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। এটা কোন ধরনের নীতি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিদ্যুৎ খুটি দিয়ে সংযো্গ দেওয়ার নামে সহজ-সরল গ্রাহকের থেকে কোটি-কোটি টাকা নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এবিষয়ে সুষ্ঠ্য তদন্ত করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
সরেজমিনে মানিকছড়ি গুচ্ছগ্রাম মৌলভী পাড়ায় গেলে, ওই এলাকার বাসিন্দা ভিক্ষুক শেফালী বেগম বলেন, আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাত পেতে ভিক্ষা করে খাই। অনাহারে-অর্ধাহারে আমার সংসার চালানোর চেষ্টা করি। আসাদুল বিদ্যুৎ সংযোগের কথা বলে আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও কোন বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করছেনা। আমি বিদ্যুৎ সংযোগ চাই অথবা আমার টাকা ফেরৎ চাই।
গত কয়েক বছর আগেও গ্রামের অর্ধশতাধীক পরিবার হতে ১ লক্ষ টাকা আদায় করে। অদ্যাবধি তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে এখন তারা বলে আগের হিসাব বাদ এখন নতুন করে ১০/১৫ হাজার করে টাকা দিলে বিদ্যুতের খুঁটি দেয়া হবে। না হলে পরে ২০/৩০ হাজার করে টাকা দিলেও পাবে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব ঝুকিপূর্ন খুটিগুলো অপসারণ করে নতুন খুটি স্থাপনের জন্য গুইমারার লাইনম্যান অহিদ ও মাটিরাঙ্গার আলমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগের উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলী দফায় দফায় কয়েক লক্ষ টাকা নিয়েছে। কিন্তু এখনো ঝুকিপূর্ণ খুঁটিগুলোকে অপসারণ করেনি। এ সব খুঁটি গুলো বাস্তবিক অর্থে বিদ্যুৎ বিভাগের ব্যাপক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ দুর্নীতির প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এছাড়াও গ্রাহকদের মিটার না দেখে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল দেওয়া ও নেওয়ার হয়রানী করা ও মিটার রিডিং এর সাথে বিদ্যুৎ বিলের গরমিল থাকলেও তার কোন সমাধান পাচ্ছে না গ্রাহকরা। অভিযোগ উঠেছে গুইমারার লাইনম্যান অহিদ একই স্থানে দীর্ঘ দিন অবস্থান করে অনিয়ম-দুর্নীতি করে গড়েছে টাকার পাহাড়। যে টাকায় এ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে জায়গা-জমিও ক্রয় করারও জনশ্রুতি রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ অনিয়মের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলী মো: আবু হানিফ বলেন, আমি এই বিষয়ে অবগত নয়, বিষয়টা আমি তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।